কম্পিউটার ভাইরাস বিষয়ে আমরা অনেক কিছুই ইতোমধ্যে জেনে ফেলেছি। তবু আমাদের আইসিটি যন্ত্রের নিরাপত্তার কথাটি মাान রেখে এ বিষয়ে আরও জানা প্রয়োজন। প্রাণীদেহে ভাইরাস আক্রমণের | মতোই এ ভাইরাসগুলো আমাদের আইসিটি যন্ত্রের ক্ষতি করে থাকে। VIRUS শব্দের পূর্ণরূপ হলো Vital Information Resources Under Siege যার অর্থ দাঁড়ায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ দখলে নেওয়া বা ক্ষতি সাধন করা। ১৯৮৩ সালে এ নামকরণ করেছেন প্রখ্যাত গবেষক University of New Haven'-এর অধ্যাপক থ্রেড কোহেন (Fred Cohen)। ভাইরাস হলো এক ধরনের সফটওয়্যার যা তথ্য ও উপাত্তকে আক্রমণ করে এবং যার নিজের সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষমতা রয়েছে। ভাইরাস কম্পিউটারে প্রবেশ করলে সাধারণত সংখ্যা বৃদ্ধি হতে থাকে ও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তকে আক্রমণ করে এবং এক পর্যায়ে গোটা কম্পিউটার বা আইসিটি যন্ত্রকে সংক্রমিত করে অচল করে দেয়। যেমন- বুট ভাইরাস ডিস্কের বুট সেক্টরকে আক্রমণ করে। অতি পরিচিত কিছু ভাইরাস হলো স্টোন (Stone), ভিয়েনা (Vienna), সিআইএইচ (CTH), ফোল্ডার (Folder), Trojan Horse ইত্যাদি।
কোনোভাবে কম্পিউটার বা আইসিটি যন্ত্র ভাইরাসে সংক্রমিত হলে তা ক্রমে ক্রমে বিস্তার ঘটে। সিডি, পেনড্রাইভ কিংবা অন্য যেকোনোভাবে ভাইরাসযুক্ত একটি ফাইল ভাইরাসমুক্ত কম্পিউটার বা কোনো আইসিটি যন্ত্রে চালালে ফাইলের সংক্রমিত ভাইরাস কম্পিউটার বা যন্ত্রটির মেমোরিতে অবস্থান নেয়। কাজ শেষ করে ফাইল বন্ধ করলেও সংক্রমিত ভাইরাসটি মেমোরিতে রয়েই যায়। ফলে ভাইরাসমুক্ত কম্পিউটার বা আইসিটি যন্ত্র ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। একই অবস্থা ঘটে কোনো ভাইরাস সংক্রমিত প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার চালালেও।
এভাবে মেমোরিতে স্থান দখলকারী ভাইরাস পরবর্তীতে অন্যান্য প্রোগ্রাম এবং ফাইলকেও আক্রমণ করে। কোনো কোনো ভাইরাস তাৎক্ষণিকভাবে সকল প্রোগ্রাম ও ফাইলকে গ্রাস করে, আবার কোনো কোনো ভাইরাস শুধু নতুন প্রোগ্রাম ও ফাইলকেই আক্রান্ত করে। ফাইল ও প্রোগ্রামসমূহ গ্রাস করতে করতে ভাইরাস তার ইচ্ছামতো কম্পিউটারের অভ্যন্তরে সার্বিক ক্ষতিসাধন শুরু করে। এভাবে একটি ভাইরাসমুক্ত কম্পিউটার ধীরে ধীরে ভাইরাসে সংক্রমিত হয় এবং উক্ত সংক্রমিত কম্পিউটারে ব্যবহৃত সিডি, হার্ডডিস্ক, ইন্টারনেট ইত্যাদির মাধ্যমে ভাইরাসটি অন্যান্য কম্পিউটারে ছড়িয়ে পড়ে।
কম্পিউটার বা আইসিটি যন্ত্র ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণসমূহঃ
ভাইরাস সাধারণত যা যা ক্ষতি করতে পারে :
এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আমরা কী করতে পারি? এখানেই এন্টিভাইরাসের কথা এসে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এন্টিভাইরাস আমাদেরকে এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে। কম্পিউটার বা আইসিটি যন্ত্রের ভাইরাসের প্রতিষেধক হলো এন্টিভাইরাস। সিস্টেম ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে এটি নির্মূল করতে হয়। ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে এন্টিভাইরাস ইউটিলিটি ব্যবহার করা হয়। এই ইউটিলিটিগুলো প্রথমে আক্রান্ত কম্পিউটারে ভাইরাসের চিহ্নের সাথে পরিচিত ভাইরাসের চিহ্নগুলোর মিলকরণ করে। অতঃপর এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারটি তার পূর্বজ্ঞান ব্যবহার করে সংক্রমিত অবস্থান থেকে আসল প্রোগ্রামকে ঠিক করে। একটি ভালো এন্টিভাইরাস সাধারণভাবে প্রায় সব ধরনের ভাইরাস নির্মূল করতে পারে। নতুন ভাইরাস আবিষ্কৃত হওয়ার সাথে সাথে এন্টিভাইরাস Update করলে এর শক্তি ও কার্যক্ষমতা প্রতিনিয়ত উন্নত হয়। ফলে নতুন নতুন ভাইরাস ধ্বংস করতে পারে। বর্তমানে অনেক এন্টিভাইরাস রয়েছে যেগুলো ভাইরাস চিহ্নিত করে, নির্মূল করে এবং প্রতিহত করে। আজকাল প্রায় প্রত্যেক অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যারের সাথে সংযুক্ত অবস্থায় এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার দেওয়া থাকে। এছাড়াও এখনকার এন্টিভাইরাসগুলো ভাইরাস আক্রমণ করার পূর্বেই তা ধ্বংস করে অথবা ব্যবহারকারীকে সতর্ক করে। ফলে এগুলো পূর্বের এন্টিভাইরাসের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর। এখানে একটি কথা অবশ্যই আমাদের মনে রাখতে হবে যে এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার সবসময় আপডেট রাখতে হবে।
ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আজকাল বিনামূল্যে ইন্টারনেট থেকে এন্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার ডাউনলোড এবং ইনস্টল করে আইসিটি যন্ত্রপাতির নিরাপত্তা অনেকাংশ নিশ্চিত করা যায়। উল্লেখযোগ্য কিছু এন্টিভাইরাস প্রোগ্রামের নাম হলো-
কম্পিউটার বা আমাদের আইসিটি যন্ত্রগুলোকে ভাইরাসমুক্ত রেখে ব্যবহার করতে আমরা নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে পারি ।
১. অন্য যন্ত্রে ব্যবহৃত সিডি, পেনড্রাইভ, মেমোরি কার্ড ইত্যাদি নিজের যন্ত্রে ব্যবহারের পূর্বে ভাইরাস মুক্ত
করে নেয়া। (এন্টি ভাইরাস দ্বারা স্ক্যান করে নেওয়া ২. অন্য কম্পিউটার থেকে কপিকৃত সফ্টওয়্যার নিজের কম্পিউটারে ব্যবহারের আগে সফ্টওয়্যারটিকে
ভাইরাস মুক্ত করা।
৩. অন্য যন্ত্রের কোনো ফাইল নিজের যন্ত্রে ব্যবহারের পূর্বে ফাইলটিকে ভাইরাস মুক্ত করা।
৪. ইন্টারনেট থেকে কোনো সফ্টওয়্যার নিজের কম্পিউটারে ডাউনলোড করে ইনস্টল করার সময়ে সতর্ক থাকা। কারণ, ডাউনলোডকৃত সফ্টওয়্যারে ভাইরাস থাকলে তা থেকে তোমার কম্পিউটারটিও ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারে ।
৫. অন্যান্য কম্পিউটারে বা যন্ত্রে ব্যবহৃত সফ্টওয়্যার কপি করে ব্যবহার না করা ।
৬. কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করলে সতর্কতামূলক বার্তা প্রদর্শন করার জন্য এন্টিভাইরাস সফ্টওয়্যারটিকে হালনাগাদ করে রাখা প্রয়োজন।
৭. প্রতিদিনের ব্যবহৃত তথ্য বা ফাইলসমূহ আলাদা কোনো ডিস্ক বা পেনড্রাইভে ব্যাকআপ রাখা, তবে এক্ষেত্রে ডিস্ক বা পেনড্রাইভটি অবশ্যই ভাইরাস মুক্ত হতে হবে।
৮. ই-মেইল আদান-প্রদানে সতর্কতা অবলম্বন করা। যেমন : সন্দেহজনক সোর্স থেকে আগত ই-মেইল open না করা। করলেও ভাইরাসমুক্ত করে তা খোলা উচিত।
৯. গেম ফাইল ব্যবহারের আগে অবশ্যই ভাইরাস চেক করতে হবে।
পাসওয়ার্ড
পরিবারের সবাই বাড়ির বাইরে বেড়াতে গেলে সাধারণত আমরা বাড়ির দরজায় তালা লাগিয়ে যাই। কেন? বাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য, তাই না। এখন একটু চিন্তা কর, তালা জিনিসটা আসলে কী? যে কেউ যেকোনো চাবি দিয়ে তোমার বাড়ির তালাটি খুলতে পারে না। কারণ পৃথিবীর প্রত্যেকটি তালার জন্য ভিন্ন ভিন্ন চাবি রয়েছে। এক তালার চাবি দিয়ে অন্য একটি তালা খোলা যায় না। এভাবে আমরা তালা দিয়ে আমাদের বাড়িসহ অন্যান্য জিনিসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করি। এখন অবশ্য নম্বর দেওয়া এক ধরনের তালা দেখা যায়, যেখানে নম্বর মিলিয়ে তালাটি খুলতে হয়। এক্ষেত্রে নম্বরটি চাবির কাজ করে। কিন্তু ডিজিটাল প্রযুক্তির এ যুগে আরো অনেক কিছুর নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হয়। তোমরা নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছ কীসের কথা বলছি।
ঠিক ধরেছ, আমরা আমাদের তথ্য ও উপাত্তের নিরাপত্তার কথা বলছি। আইসিটির এ যুগে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, উপাত্ত ও সফটওয়্যার নিরাপত্তায় এক ধরনের তালা দিতে হয়। এ তালার নাম পাসওয়ার্ড।
তোমরা অনেকে নিশ্চয়ই ইতোমধ্যে পাসওয়ার্ড তৈরি ও ব্যবহার করে ফেলেছ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এখন সবখানে। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এর প্রসার যত বাড়ছে নিরাপত্তার প্রশ্নটি তত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। আমাদের ব্যক্তিগত সকল তথ্য যেমন ব্যাংক একাউন্ট, আয়করের হিসাব, চাকরির বিভিন্ন তথ্য ইত্যাদি ছাড়াও নানা তথ্য-উপাত্ত এখন ডিজিটাল ব্যবস্থার আওতায় আসছে। এছাড়াও আমাদের আইসিটি যন্ত্রপাতি যেমন- কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট কিংবা মোবাইল ফোনগুলো সফটওয়্যার দ্বারা পরিচালিত হয়। আমরা যখন ইন্টারনেট ব্যবহার করি তখন পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের কম্পিউটার বা আইসিটি যন্ত্রের সাথে যোগযোগ করতে পারি। তেমনি অন্য যে কেউ আমাদের যন্ত্রের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে। এর মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্যও অন্যের কাছে চলে যেতে পারে কিংবা কেউ আমাদের যন্ত্রের সফটওয়্যারের ক্ষতি করতে পারে। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে আমাদের নিরাপত্তা প্রয়োজন। এসব তথ্য ও আমাদের যন্ত্রের সফটওয়্যারসমূহ রক্ষা করতে পাসওয়ার্ডের কোনো বিকল্প নেই। পাসওয়ার্ড দেওয়া থাকলে যে কেউ ইচ্ছা করলেই আমাদের তথ্য নিতে পারবে না বা ক্ষতি করতে পারবে না। তবে এখানে একটি কথা অবশ্যই জেনে রাখতে হবে যদি কেউ বুদ্ধি খাটিয়ে আমরা যে পাসওয়ার্ড দিয়েছিলাম তা ধরে ফেলতে পারে তাহলে সে আমাদের সকল তথ্য নিয়ে নিতে পারবে। তথ্য নষ্ট করতে চাইলে নষ্ট করতে পারবে। অনেকটা ডুপ্লিকেট চাবি বানিয়ে তালা খুলে ফেলার মতো। তাই পাসওয়ার্ড তৈরি করতে আমাদের অনেক দক্ষ হতে হবে। অন্য কেউ ধারণা করতে পারে এমন সহজ পাসওয়ার্ড যেমন তৈরি করা যাবে না আবার নিজেই ভুলে যেতে পারি এমন পাসওয়ার্ড তৈরি করা যাবে না।
বেশিরভাগ মানুষ 123456 বা 654321 বা abcdef এ ধরনের পাসওয়ার্ড তৈরি করে। ফলে পাসওয়ার্ড জেনে যাওয়া বা ধরে ফেলা সহজ হয়। যদিও অনেক ব্যবহারকারী অনন্য বা Unique পাসওয়ার্ড তৈরি করাকে ঝামেলার কাজ মনে করে। তথ্য-উপাত্তের দিকটি বিবেচনায় নিলে Unique বা মৌলিক পাসওয়ার্ড তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সার্ভার, কম্পিউটার বা যেকোনো আইসিটি যন্ত্রে রক্ষিত তথ্য ও উপাত্তের নিরাপত্তা বিধানের সাথে সাথে গোপনীয়তা বজায় রাখার কাজটিও পাসওয়ার্ড করে থাকে। তোমার পাসওয়ার্ড যদি Unique না হয় তবে
১. দুর্বল পাসওয়ার্ডের কারণে ভাইরাস সহজেই আক্রমণ করতে পারে।
২. হ্যাকারদের সহজেই হ্যাক করার সুযোগ করে দিতে পারে। এতে তোমার ব্যাংকে রাখা টাকা ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অন্যের হাতে চলে যেতে পারে ।
৩. তোমার সহজ পাসওয়ার্ডের কারণে আইসিটি যন্ত্রে রক্ষিত তথ্য নষ্ট করার সুযোগ তৈরি হতে পারে ।
কীভাবে মৌলিক পাসওয়ার্ড তৈরি করা যায়? এটি একটি সৃজনশীল কাজ । তোমার সৃজনশীলতাই তোমার তথ্য বা সফটওয়্যারের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষা করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চললে কাজটি করতে আমাদের অনেক সুবিধা হবে।
Unique পাসওয়ার্ড তৈরির সময় আমাদের লক্ষ রাখতে হবে:
এ কাজগুলোর সাথে যদি সৃজনশীলতা যোগ হয় তবে পাসওয়ার্ডটি হয়ে উঠতে পারে Unique পাসওয়ার্ড।
আমাদের পাসওয়ার্ডগুলো হতে পারে এমন-
তবে পাসওয়ার্ড অবশ্যই মনে রাখার মত হওয়া উচিত। প্রায়শ পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করাও একটি জরুরি কাজ। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের তথ্য ও সফটওয়্যারের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষা করতে সক্ষম হব।
আরও দেখুন...